রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৯ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: দিনের বেলায় শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে প্রথমে টার্গেট নির্ধারণ করেন তারা। সরেজমিনে দেখে নেন মালামালের পরিমাণ, সম্ভাব্য প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ এবং নিরাপত্তাব্যবস্থার হাল-হকিকত। পরে ভোররাতে সবাই মিলে শ্রমিকের বেশে ঝড়ের গতিতে মালামাল তুলে আনেন। সদলবলে চুরি করতে যাওয়ার পাশাপাশি মালামাল বহনের কাজে তারা ব্যবহার করেন ভাড়া করা ট্রাক। তাদের প্রতিটি দলে আছেন ১০ থেকে ১৫ জন সক্রিয় সদস্য।
গত ১৬ আগস্ট ঢাকার মিরপুরে শাহ আলী থানা এলাকার ২ নম্বর সড়কের ৩০ নম্বর বাড়ির সামনে থেকে মালামাল চুরির একটি ঘটনার সূত্র ধরে এমন বেশ কয়েকটি সংঘবদ্ধ চোরচক্রের খোঁজ পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, সেদিন মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের নিয়ামত শিকদারের বাড়ির সামনে থেকে ২ টন ট্রাক তুলে নিয়ে যায় এমন একটি চোরের দল। বাড়ির মালিক ঘটনাটি তখন শাহ আলী থানাকে অবহিত করেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বিষয়টি জানান ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৬-৭ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলাও দায়ের করা হয়।
মামলার পর কয়েকদিন ধরে ঘটনাস্থল ও আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ফোন ট্র্যাক করে চোরাই রড পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত ট্রাকের খোঁজ পাওয়া যায়। আটক করা হয় এই কাজে জড়িত সেন্টু মাদবর ও মো. মামুন নামের ২ ব্যক্তিকে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুসারে গাজীপুর থেকে ধরা হয় বিল্লাল হাওলাদার, মো. ইমন, রাশেদুল ইসলাম রাসেল এবং মো. ইমরান হোসেনকে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা চুরির ঘটনায় তাদের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেন। সেখান থেকেই জব্দ করা হয় ২ টন চোরাই রড।
শাহ আলী থানার ওসি আমিনুল ইসলামের ভাষ্য, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা অনেকদিন ধরেই চুরি-ডাকাতির সঙ্গে জড়িত। তাদের সবার নামে বিভিন্ন থানায় একাধিক চুরি-ডাকাতির মামলা আছে।
আমিনুল বলেন, ‘এসব চোর চক্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এরা ভোরের দিকে শহরের জনশূন্য অলিগলিতে দলবেঁধে চুরি করেন। চুরির সময় তারা এমন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে চোরাই পণ্য ট্রাকে তোলেন যে লোকে ভাবে তারা মালিকের ফরমায়াশেই গাড়িতে মালামাল তুলছেন।’
গেপ্তার আসামিদের বরাত দিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দারুস সালাম জোনের সহকারী কমিশনার মফিজুর রহমান পলাশ বলেন, ‘রাজধানীতে এমন বেশ কয়েকটি সংঘবদ্ধ চোরচক্র সক্রিয় রয়েছে বলে জানা গেছে। প্রতি দলে ১০ থেকে ১৫ জন সক্রিয় সদস্য আছেন।’
এই চোরচক্রের সদস্যদের প্রতিহত করতে জনসচেতনতা তৈরির তাগিদ দিয়ে মূল্যবান জিনিসপত্র সুরক্ষায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও পর্যাপ্তসংখ্যক নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েনের পরামর্শ দেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।